লালবাগ কেল্লার পাশ হয়ে আজিমপুর এতিমখানা। তিন মিনিট হাঁটলেই আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড। যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়াতেই ভেসে আসলো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। অসহ্য গাড়ির হর্ন আর কোটি মানুষের শহরে এমনটা অপ্রত্যাশিত হলেও ভালো লাগার মতো। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় পৃথিবীর তিনভাগের দুই ভাগ মানুষ এখন গৃহবন্দি। সবার মধ্যে আতঙ্ক। রাজধানীও তার ব্যতিক্রম নয়। দুদিনে বদলে গেছে মহানগরীর চিত্র। যে শহরে স্রোতের মতো মানুষের চলাচল থাকে ফুটপাতে, সে ফুটপাত এখন জনশূন্য। যে শহরে ঘর থেকে বের হয়ে কত সময় যানজটে থাকতে হবে থাকে সেই দুশ্চিন্তায়! সে সড়ক এখন ফাঁকা। করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে দীর্ঘ ছুটির কারণে এমন দৃশ্য এখন রাজধানীর।
আজ শুক্রবার রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কগুলোতে কোনো গণপরিবহন নেই। যাত্রী ছাউনি ছিলো যাত্রীশূন্য। জরুরি গাড়ি ছাড়া কোনো গণপরিবহন চলছে না। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডেও নেই কোনো গাড়ি। তবে সড়কে সীমিত আকারে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেট কার চলছে।
আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে ক্রমস রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। এখন এটার চূড়ান্ত পর্যায়। গাড়ি নেই বললেই চলে। গাড়ি কম তাই নিয়ন্ত্রণ করা লাগছে না।
তবে অসুস্থতা বা জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে বিপাকে পড়তে দেখা যায়। হাজারিবাগের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মা খুব অসুস্থ ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত লাগবে। ডাক্তার বলছে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কিন্তু দুই ঘণ্টার চেষ্টায় গাড়ি মিলছে না। অ্যাম্বুলেন্সে নিতেও এখন অনেক টাকার প্রয়োজন! এরপরও চেষ্টা করছি। এমন পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতে পারিনি।
দেখা যায়, সিটি কলেজ, জিগাতলা, শিয়া মসজিদ, শ্যামলী, কল্যাণপুরের সড়ক যেনো সুনশান। ঈদের ছুটিতে বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি চলে গেলে রাজধানীর যে চিত্র হয়, এখন তার চেয়েও জনশূন্য ও নিস্তব্ধ। হরতাল অবরোধেও কখনো এমন চিত্রের দেখা মেলেনি মহানগরীতে। সবাই যেনো যুদ্ধে নেমেছে। এতে জয়ী হতে হলে বাইরে থেকে নয়, ঘরে বসেই লড়তে হবে। সামাজিক মানুষগুলো তাই আজ খুব বেশি অসামাজিক ভাব নিয়ে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন শুরু করেছেন।
তবে সুনশান রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। বের হওয়া অল্প সংখক পথচারীদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছিলেন তারা। আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে, খুব জরুরি দরকারে বের হলেও পুলিশকে যথাযথ প্রমাণ দেখাতে হবে। তবে আওতামুক্ত আছে জরুরি সেবাগুলো।
এছাড়াও করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করেও মানুষজনকে ঘরে অবস্থানের কথা বলা হচ্ছে। এ সম্পর্কে লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের না হতে নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যারা বের হচ্ছেন তাদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। সড়কে অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্র, কাঁচামালসহ জরুরি গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়িগুলোকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।